কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল আশ্রাফুল উলুম হাফেজিয়া নুরানীয়া ফুরকানিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। এখানে আবাসিক ব্যবস্থাপনায় আট থেকে দশ-বার বছর বয়সী শিশুরা হাফেজি শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হয়। একসঙ্গে থাকার কারণে শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি নানারকম দুষ্টমিতে মেতে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাদরাসার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা এসব শিশু শিক্ষার্থীদের দুষ্টমি করে এক শিক্ষার্থীর চানচুর না বলে অন্য শিক্ষার্থীরা লুকিয়ে রাখার ঘটনায় ঢালাওভাবে প্রায় ৫০জনের বেশি শিশুকে অমানবিক শাস্তি দেয়ায় ২৫ শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওই মাদরাসার এক শিক্ষার্থীর চানচুর অন্য শিক্ষার্থীরা চুপিসারে লুকিয়ে ফেললে এঘটনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে মাদরাসার সভাপতি মোঃ বাদশা মিয়া, শিক্ষক মোঃ মোতালেব, শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান ও হাফেজ মোঃ সফিকুল ইসলাম মিলে ৫০জনের বেশি শিশু শিক্ষার্থীর মাথা নিচে,পা উপরে (হেডডাউন) রেখে ৩০মিনিট এভাবে শাস্তিতে রাখায় প্রায় ২৫জন শিক্ষার্থীর বমি ও নাকে-মুখে দিয়ে রক্ত বের হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ সময় অন্য শিক্ষার্থীদের শোর-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন মারমুখী হয়ে মাদরাসা ঘেরাও করে। তখন থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অসুস্থ শিশুদের উদ্ধার করে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুমিল্লার মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া এক শিক্ষার্থীর পিতা মোঃ ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করলে রাতেই মাদরাসার সভাপতি মোঃ বাদশা মিয়া, শিক্ষক মোঃ মোতালেব, শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান ও হাফেজ মোঃ সফিকুল ইসলা কে লিশ গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, আলআমিন (১০) নামে ওই মাদরাসার এক ছাত্রকে কয়েকদিনের ছুটি শেষে সোমবার বিকেলে তার মা মাদরাসায় পৌঁছে দেয়। এসময় তিনি ছেলে এক প্যাকেট চানাচুর কিনে দেন। আলআমিন ওই চানাচরসহ ব্যাগ মাদরাসায় রেখে তার মাকে বিদায় জানিয়ে মাদরাসায় ফিরে এসে দেখে তার চানাচুরের প্যাকেট নেই। তখন স্েগ সঙ্গে সে তার মাকে জানালে তিনি মাদরাসায় এসে সভাপতি ও শিক্ষককে বিষয় জানিয়ে বাড়ি চলে যান। সন্ধ্যায় মাদরাসার সভাপতি ও শিক্ষকরা মিলে শিশু শিক্ষার্থীদের চানাচুরের প্যাকেট লুকিয়ে রাখার দায়ে আধ ঘন্টার হেড-ডাউন শাস্তিতে প্রায় ২০/২৫জন শিশু রক্তবমি করাসহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বুড়িচং থানার ওসি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন পিপিএম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়ি দিয়ে বুড়িচং এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। রাতে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করে থানায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy news ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on October 20, 2020 7:25 pm by প্রতি সময়