স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কুমিল্লার কৃতি সন্তান অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশীদ আলম।
চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের এই কৃতি সন্তানের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেমন সুনাম রয়েছে তেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত অঙ্গনেও রয়েছে পরিচিতি।
২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা.আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগের দুইদিনের মধ্যেই ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার কুমিল্লার সন্তান এবিএম খুরশীদ আলমকে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি হয়। ডা. খুরশিদ আলমের এ নিয়োগকে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমক বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, স্বাস্থ্যখাতের সকল অনিয়ম স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের এ নিষ্ঠাবান কর্মীর পক্ষেই বন্ধ করা সম্ভব। আর এটাই নতুন ডিজির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদিনে অভিনন্দন জানিয়ে যেমন শুভেচ্ছা বার্তা বইতে থাকে অপরদিকে কেউ কেউ শঙ্কাও প্রকাশ করে নিরেট সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে পরিচত খ্যাতনাম এই চিকিৎসক পারবেন কি স্বাস্থ্য বিভাগের দীর্ঘদিনের পূঞ্জিভূত হওয়া জঞ্জালের স্তুপ সরাতে?
ডা.খুরশিদ আলমকে নিয়ে কুমিল্লার একটি খ্যাতনামা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মায়মুন শরীফ রাইয়ান ফেসবুকে লিখেছেন “ অবশ্যই গর্বের বিষয়। কিন্তু আমার মনে হয়, উনি সফল হবেননা এবং সিদ্ধান্তটি ভুল। উনি একজন তুখোড় পড়ুয়া, এ্যাকাডেমিশিয়ান এবং সর্বোপরি একজন সৎ ও দক্ষ সার্জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জটিল জাল, রাজনীতি মোকাবেলা করা উনার পক্ষে খুবই কঠিন হবে।” জবাবে যমুনা টিভির কুমিল্লা রির্পোটার খালিদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন, “ক্ষমতার চেয়ারে ওনি সফল হউন। সাহেদদের অক্টোপাস থেকে ডিপার্টমেন্টকে মুক্ত করাটাই তার সততার বড় পরীক্ষা। দেশের স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি বিদায় নেবার সময় আমরা যেন সত্যিই গর্ববোধ করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা।”
গত দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে কুমিল্লার কৃতি সন্তান ডা. খুরশিদ আলমকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসছে নানা প্রত্যাশা ও শংশয়ের কথা।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের গ্রামের বাড়ি চান্দিনার মাইজখার ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামে। শহরের বাসা নগরীর ঝাউতলা এলাকায়। তার জন্ম ১৯৬১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এসএসসি পাশ করেছেন কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করে ১০ তম বিসিএসের মাধ্যমে ২২ নভেম্বর ১৯৮৪ ইন সার্ভিস ট্রেনিংয়ের আওতায় সহকারী সার্জন হিসেবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন।
১৯৮৬ সালের ৪ অক্টোবর মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি সহকারী সার্জন হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর সার্জারী বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবেও তিনি কৃতিত্বের সাথে চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করেন। সার্জারি বিষয়ের জুনিয়র কন্সালটেন্ট হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে সিনিয়র কন্সালটেন্ট হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল এর দায়িত্ব পালন করে এই কৃতি শিক্ষক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক হিসেবে ২০১৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন।
১০ম বিসিএস এর এ দক্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৭ তম মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই চিকিৎসকের লন্ডন থেকে দুটি বিষয়ে এফআরসিএস করা। এছাড়া সার্জারিতে তিনি এফসিপিএস এবং এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আজীবন সদস্য।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সংস্কৃতি অঙ্গনেও রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভুক্ত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। প্রয়াত সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের প্রিয় শিষ্যদের একজন তিনি। এক কালে ওয়াহিদুল হকের ছায়াসঙ্গী ছিলেন অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম। এছাড়া জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ কুমিল্লা শাখার প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি। পরে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
ডা.খুরশীদ আলমের প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষক আবু নায়ীম আল মামুন জানান, ডা.খুরশিদ আলম একজন বনেদি পরিবারের সন্তান। ওনার দাদা মৃত ছফিউল্লাহ ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ওনার দাদার বেশ সুনাম রয়েছে। ওনার বাবা মো.মমিনুল হক ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী। তিনি তাবলীগ জামায়াত করতেন। সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওনার স্ত্রী দেশ বরেন্য গাইনী চিকিৎসক ডা. ফাতেমা রহমান। এলাকায় ডা.খুরশিদ আলমের পরিবারের বেশ সুনাম রয়েছে। মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান-অনুদানে তাদের অবদান রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ওই পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের হিসেবে পরিচিত।
Last Updated on July 25, 2020 8:36 am by প্রতি সময়