-ঝরে পড়ার কারণ বাল্যবিয়ে" />
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবছর ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় ৩৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিচ্ছে না। ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর কেউই রেজিষ্ট্রেশন করে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেনি। এরমধ্যে ২৫ হাজার ছাত্রী রয়েছে। পরীক্ষা থেকে ঝরে পড়া বা ফরম পূরণ না করার কারণ হিসেবে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ও স্কুল প্রধানরা মনে করছেন অভিভাবকের বদলিজনিত স্থানান্তর, ছেলে শিক্ষার্থীদের উপার্জনে ঝুঁকে পড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনাকালে পড়ালেখা বন্ধ করে দেওয়া ও বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া।
কুমিল্লা বোর্ডের ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন এবং ফরম পূরণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্রীপুর জেলায় এসএসসির জন্য মোট রেজিষ্ট্রেশনকারীর সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ২৮৮ জন ছাত্র-ছাত্রী।এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৩ জন। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না ৩৬ হাজার ৯৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রী।
এদিকে রেজিষ্ট্রেশন করা ৮৯ হাজার ৫৮১ জন ছাত্রের মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ৭৮ হাজার ৩৯৬ জন। ফলে এবারের এসএসসিতে অংশ নিচ্ছে না ১১ হাজার ১৮৫ জন ছাত্র। অপরদিকে রেজিষ্ট্রেশন করা ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৭ জন। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না ২৫ হাজার ৭৬০ জন ছাত্রী।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবাই শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়েছে এমন নয়। এরমধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীও রয়েছে। তবে বেশির ভাগই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে।করোনা মহামারির পর যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক ছেলে শিক্ষার্থী রেজিষ্ট্রেশন করার পরও অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ নিয়ে উপার্জনের পথে পা বাড়িয়েছে। আর মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার মূল কারণ বাল্যবিয়ে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক ও নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোখসানা ফেরদৌসী মজুমদার জানান,ঝরে পড়া এসব মেয়েদের শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যাওয়া তার ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলবে। করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবণতা বেড়েছে।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুস ছালাম বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে পড়ছে বেশির ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণিতে পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করলেও বিয়ে হয়ে যাবার কারণে পরীক্ষায় বসা হচ্ছে না এসব শিক্ষার্থীর। বেশির ভাগের কেউই ফিরছেন না শিক্ষা জীবনে। এবছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। যা আশংকাজনক। এব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে সব সময় অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এখানে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
Last Updated on September 13, 2022 8:21 pm by প্রতি সময়